আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী মুসলিমদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, পরকালের জীবনে জান্নাত লাভ করা। কাজেই মু্সলিম জীবনের সকল কর্মকান্ড এই একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক। সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিন জীবন শুরু করার পর থেকে, দিনশেষে আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা যত কাজ করি – সব কাজে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি মূলত জান্নাতে যাবার আকাঙ্খা থেকেই। কিন্তু জান্নাতে যেতে হলে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর থাকতে হবে – আর সেজন্য, ঈমান বলতে কী বুঝায়, কী কী বিশ্বাস করা ঈমানের জন্য অপরিহার্য ইত্যাদি জানার পাশাপাশি কী কী কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তা জানাটাও অত্যন্ত জরুরী।

কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না।” (আল-কুর’আন, ৩:১০২)

আরবি ভাষার রীতি অনুযায়ী এই আয়াতের সঠিক অর্থ দাঁড়ায় এমন যে আল্লাহ্ আমাদের বলছেন: আমরা যেন অমুসলিম অবস্থায় মারা না যাই – অর্থাৎ মৃত্যুর সময় যেন মুসলিম অবস্থায় থাকি। আর তা থাকতে হলে কী কী কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অথবা কী ঘটে গেলে আমরা সারাজীবন মুসলিম না-ও থাকতে পারি তা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আমরা সারাজীবন মুসলিম থেকেও যদি মৃত্যুর ৬ মাস, ৬ দিন, ৬ ঘন্টা বা ৬ মিনিট আগেও ঈমান হারিয়ে অমুসলিম হয়ে যাই – তা হলে আমাদের সকল সৎকর্ম ও ইবাদত বৃথা হয়ে যাবে– আমরা আর জান্নাত আশা করতে পারব না।

যে কয়টি কারণে একজন মুসলিম তার ঈমান হারিয়ে অমুসলিম হয়ে যেতে পারেন তার একটি হচ্ছে দ্বীন (ইসলাম) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া – আর মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বলতে স্কলাররা বুঝে থাকেন দ্বীন না শেখা বা বাস্তবায়ন না করা। না শেখা বলতে নিজে না শেখা এবং নিজের দায়িত্বাধীন যারা রয়েছেন তাদের জন্য দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা না করাও বোঝায়। এজন্যই শেষ বিচারের দিন একজন অভিভাবককে  জবাবদিহি করতে হবে – তার সন্তান-সন্ততি বা অধীনস্থদের জন্য তিনি দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা সে ব্যাপারে।

আমরা যদি সমকালীন মুসলিম পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে সহজেই বুঝব যে একেবারে মৌলিক (অথবা যা না হলেই নয় এমন) দ্বীন শিক্ষার ব্যাপারেও তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, আমরা অনেকেই হয়তো দ্বীন ইসলাম থেকে ইতোমধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি – আর তার ফলে আমরা অমুসলিম বলে গণ্য হওয়ার ভয়ঙ্কর সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়েছি। দুনিয়াতে সামাজিক মূল্যবোধের অভাবজনিত বিশৃঙ্খলা, দুর্গতি ও অশান্তি তো রয়েছেই – আমরা, আখিরাতে সর্বস্ব হারানোর সমূহ ঝুঁকি ও সম্ভাবনার সম্মুখীন। এসব কথা মাথায় রেখেই আমরা মুসলিম ঘরের সন্তানদের ন্যূনতম মুসলিম হতে ও থাকতে যে মৌলিক জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজন, সেটুকুর সুযোগ করে দেয়ার সংকল্প নিয়ে সম্পূর্ণ অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের সূচনা করি।

আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে, এখানে আপনার সন্তানেরা বাংলা মাধ্যম জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পার্থিব শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত চরিত্রের মুসলিম হিসেবে বড় হবে। আমরা আশা করব আমাদের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে না পারলেও, আপনারা আমাদের প্রচেষ্টাটুকুর সফলতার জন্য দোয়া করবেন ইনশা’আল্লাহ্!